আর্কাইভ  রবিবার ● ২৪ আগস্ট ২০২৫ ● ৯ ভাদ্র ১৪৩২
আর্কাইভ   রবিবার ● ২৪ আগস্ট ২০২৫
জয়ের জটিল সমীকরণ

জয়ের জটিল সমীকরণ

হাসিনার মামলায় ১৬ চানখাঁরপুল মামলায় ৮ জনের সাক্ষ্য শেষ

জুলাই-আগস্টে মানবতাবিরোধী অপরাধ
সীমাহীন বর্বরতা
হাসিনার মামলায় ১৬ চানখাঁরপুল মামলায় ৮ জনের সাক্ষ্য শেষ

ছুটিতে পাঠানো সেই ১২ বিচারপতি কোথায়?

ছুটিতে পাঠানো সেই ১২ বিচারপতি কোথায়?

হাসিনার পলায়ন উদযাপনের জনস্রোতে কেন এত গুলি, কেন এতো আক্রোশ

হাসিনার পলায়ন উদযাপনের জনস্রোতে কেন এত গুলি, কেন এতো আক্রোশ

গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে হরিপুর তিস্তা  সেতু উদ্বোধনের আগেই ঝুঁকিতে!

সোমবার, ৪ আগস্ট ২০২৫, দুপুর ০৪:৩৮

Advertisement Advertisement

খায়রুল ইসলাম, গাইবান্ধা থেকে: গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার হরিপুর-চিলমারী তিস্তা সেতুর মাত্র ৪/৫শ মিটার পূর্বে হরিপুর ইউনিয়নের চর হরিপুর এলাকায় তিস্তা নদী থেকে অবৈধভাবে তোলা হচ্ছে বালু। খননযন্ত্র দিয়ে তোলা সেই বালু লম্বা পাইপের মাধ্যমে ফেলা হচ্ছে তিস্তা সেতুর সংযোগ সড়ক ঘেঁষে একটি জমিতে। এতে ঝুঁকিতে গাইবান্ধা-কুড়িগ্রাম জেলার সীমান্তে নির্মিত স্বপ্নের হরিপুর-চিলমারী তিস্তা সেতু। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, হরিপুর ইউপি চেয়ারম্যান মাজহারুল ইসলামের সহায়তায় আইন লঙ্ঘন করে সেতুর কাছ থেকে অবৈধভাবে বালু তুলে বিক্রি করছে প্রভাবশালী চক্র। এর ফলে উদ্বোধনের আগেই ঝুঁকিতে পড়ছে তিস্তা সেতু। নদী থেকে বালু উত্তোলন বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি এলাকাবাসী ও সচেতন মহলের ।

স্থানীয়রা জানায়, হরিপৃু গ্রামের ইসমাইল পাগলা ওরফে নুর ইসলামের ছেলে গ্রাম পুলিশ মোজাহারের নেতৃত্বে জাহাঙ্গীর, সাইদুল, রেজাউল, ফারুক, ফুল মিয়া দীর্ঘদিন যাবত বালু তুলে জমজমাট ব্যবসা করছেন। চর এলাকা ও মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ায় তাদের জমজমাট বালুর ব্যবসায় কেউ বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে না। 

বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন, ২০১০ এর ধারা ৪-এর (খ) অনুযায়ী, সেতু, কালভার্ট, বাঁধ, সড়ক, মহাসড়ক, রেললাইন ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সরকারি ও বেসরকারি স্থাপনা অথবা আবাসিক এলাকা থেকে এক কিলোমিটারের মধ্যে বালু উত্তোলন নিষিদ্ধ। কিন্তু এই আইন অমান্য করে তিস্তা নদী থেকে তোলা হচ্ছে বালু। সেই সঙ্গে ভরাট করা হচ্ছে আশেপাশের নতুন বাড়ি করার জায়গা ও মহাসড়কের পাশে জমি। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সম্প্রতি সুন্দরগঞ্জ উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও সুন্দরগঞ্জ থানা পুলিশ বালু উত্তোলন বন্ধের জন্য অভিযান করে। কিন্তু তারা অবৈধ বালু উত্তোলনকারীদের তোপের মুখে পড়েন। পরে তারা অভিযান না করেই ফিরে আসতে বাধ্য হন। এরপর গত ৫ জুলাই কুড়িগ্রাম চিলমারীর নৌ পুলিশ ফাঁড়ি বালু তোলার খননযন্ত্র বন্ধ করতে গিয়ে একজনকে আটক করে। কিন্তু সংঘবদ্ধ বালু উত্তোলনকারী ও তাদের মাস্তান বাহিনী নৌ পুলিশের ওপর হামলা করে আসামীকে ছিনিয়ে নেয়। এ ঘটনায় চিলমারী নৌ পুলিশ ফাঁড়িতে কর্মরত এসআই সেলিম জামান সরকার বাদি হয়ে সুন্দরগঞ্জ থানায় নিয়মিত একটি মামলা করেন। মামলার ১২ জনের নাম  উল্লেখ করে ২৫/৩০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়। মামলার পর আসামীরা জামিনে মুক্তি পেয়ে পুনরায় শ্যালো মেশিন বসিয়ে বালু উত্তোলন শুরু করে। মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেন সুন্দরগঞ্জ থানার ওসি আবদুল হাকিম আজাদ ।

সম্প্রতি গিয়ে দেখা যায়, সেতুর নিচে উত্তর-পূর্ব পাশে নদীতে ড্রাম ও বাঁশ দিয়ে তৈরি বাল্কহেড ভাসছে। এর ওপর একটি বালু তোলার যন্ত্র (ডিজেলচালিত শ্যালো মেশিন) বসানো হয়েছে। সেই যন্ত্র থেকে পাইপ নদীতে নামিয়ে দেওয়া হয়েছে। অপর পাশে পাইপ দিয়ে নদী থেকে বালু তোলা হচ্ছে। তিস্তা সেতুর সংযোগ সড়কের পাশে বালু স্তুপ করে রাখা হয়েছে। নদী থেকে বালু তোলার কাজ তদারকি করছেন তিন-চারজন শ্রমিক। চারপাশে পাহারা দিচ্ছেন আরও চার-পাঁচজন কর্মী ও গ্রাম পুলিশ।
বালু ব্যবসায়ীরা অত্যন্ত প্রভাবশালী হওয়ায় এলাকার কেউ প্রতিবাদ করার সাহস পায় না। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে এলাকার এক কলেজ শিক্ষার্থী বলেন, দীর্ঘদিন থেকে এখান থেকে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। তবে কারা বালু উত্তোলন করছে, তা জানি না। কিছুদিন আগে বালু তোলা নিয়ে প্রশাসনের সাথে গোলমালও হয়েছে। এতে কয়েকদিন বালু তোলা বন্ধ ছিল। কিছুদিন থেকে আবার বালু তোলা হচ্ছে। এই কাজ অব্যাহত থাকলে তিস্তা সেতু রক্ষা করা যাবে না।

জেলা এলজিইডি কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮ সালের ৫ নভেম্বর তিস্তা সেতু প্রল্পটির দরপত্র আহ্বান করা হয়। ১ হাজার ৪৯০ মিটার দীর্ঘ সেতু নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ৯২৫ কোটি টাকা। ‘চায়না স্টেট কনস্ট্রাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশন লিমিটেড’ নামের একটি চীনা প্রতিষ্ঠান এই সেতুর কাজ করেন। যানবাহন ও সাধারণ মানুষের চলাচলের জন্য আগামী ২৫ আগস্ট তিস্তা সেতু খুলে দেওয়া হবে। কিন্তু উদ্বোধনের আগেই সেতুর পাশ থেকে বালু তোলা হচ্ছে। এতে সেতুটির নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করছেন সচেতন মহল।
অভিযোগ অস্বীকার করে হরিপুর ইউপি চেয়ারম্যান মাজহারুল ইসলাম বলেন, নদীতে পাবলিকলি কেউ বালু তুলছে না, কেউ বালুর ব্যবসা করছে না। সরকারিভাবে এলজিইডি হয়তো বালু তুলতে পারে।
গাইবান্ধা এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী উজ্জ্বল চৌধুরী মোবাইল ফোনে জানান, সেতুর আশেপাশে থেকে নিয়মবহির্ভূতভাবে বালু উত্তোলন করে বিক্রির কোনো সুযোগ নেই। এতে সেতু ও সেতুর বেড়ি বাধ ভেঙে যেতে পারে। দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে তিনি জানান।

মন্তব্য করুন


Link copied